মব কিলিং" বা গণপিটুনি। এস এম শামসুল আলম

 

মব কিলিং" বা গণপিটুনি



বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বর্বরতার একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে "মব কিলিং" বা গণপিটুনি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে। মব কিলিং বলতে বোঝানো হয়, যখন একদল মানুষ নিজেরাই আইন হাতে তুলে নিয়ে কোনো অপরাধী বা সন্দেহভাজনকে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করে, যা প্রায়ই মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই ধরণের ঘটনা সমাজের আইন ও ন্যায়বিচার ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা এবং বিচারবহির্ভূত সহিংসতার একটি চূড়ান্ত রূপ।

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মব কিলিংয়ের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। মানুষের মধ্যে একটি ধারণা রয়েছে যে, অপরাধী শাস্তি পায় না বা আইনি প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীরগতি। এই হতাশা থেকে অনেকেই আইন হাতে তুলে নেয়। ছেলেধরা সন্দেহে নিরীহ মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা, ছোটখাটো অপরাধের জন্য বিচারবহির্ভূত শাস্তি দেওয়া, এমনকি কখনো কখনো সম্পূর্ণ মিথ্যা গুজবের ভিত্তিতে মানুষকে মেরে ফেলাএসব মব কিলিংয়ের করুণ উদাহরণ।

ধর্মীয় বা সামাজিক গুজবের ভিত্তিতেও মব কিলিং ঘটে। উদাহরণস্বরূপ, কিছুক্ষেত্রে গুজব ছড়ানো হয় যে কেউ ধর্মীয় অবমাননা করেছে, যা সাধারণ মানুষের অনুভূতিকে উত্তেজিত করে। এর ফলে, অপরাধের প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও অনেক মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নেয় এবং মব কিলিং সংঘটিত হয়।

এ ধরনের ঘটনা কেবল আইন ও শৃঙ্খলার প্রতি অবজ্ঞা নয়, বরং সামাজিক সচেতনতার অভাবেরও প্রতিফলন। তাছাড়া, গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহারও এই ধরণের ঘটনার পেছনে দায়ী। একবার কোনো গুজব ছড়িয়ে পড়লে, সেটি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং অনেক সময় তা গণপিটুনিতে রূপ নেয়।

সমাধান হিসেবে, সরকারের উচিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও দক্ষ ও স্বচ্ছ করে গড়ে তোলা, যাতে মানুষ বিচারব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখতে পারে। সামাজিকভাবে গণসচেতনতা বৃদ্ধি করা, শিক্ষার মাধ্যমে সহিংসতা থেকে দূরে থাকা শেখানো, এবং গুজব প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। মব কিলিং বন্ধে অপরাধীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন, যাতে অন্যরা শিক্ষা পায়।

গণপিটুনি একটি ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি, যা কেবল আইন দিয়ে প্রতিহত করা সম্ভব নয়; এর জন্য প্রয়োজন সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং নৈতিক শিক্ষার সম্প্রসারণ।


এস এম শামসুল আলম 
ইন্সট্রাক্টর (সাধারণ)
পিটিআই খুলনা।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

হেলথ টিপস