শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন

 


আমরা প্রায় শুনে থাকি যে আমাদের শিক্ষার পরিমাণগত হার বাড়লেও গুণগত মান নেই। আবার বিশ্ব র‍্যাংকিং এ আমাদের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ৫০০-১০০০ এর মধ্যে আসতে পারে না। একই সাথে শিক্ষিত বেকারের সংখাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা এসব প্রশ্নের সাথে খুব পরিচিত থাকলেও এ থেকে উত্তরণের পথে আমরা হাটছি কতটুক? যেহেতু আমি শিক্ষা বিভাগে কাজ করি তাই স্বাধীনতার ৫১ বছর পর আজ শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন নিয়ে এই ভাবনা।

আমরা যদি লক্ষ্যকরি প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার  বর্তমান যে প্রবণতা রয়েছে তার মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে শ্রেণি শিক্ষকের উপর নির্ভর করে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান। কেননা এখনো প্রাথমিক শিক্ষাটা শ্রেণিকক্ষের মধ্যে সীমাবদ্ধ আছে। কিছু সচেতন অভিভাবক আছেন যারা এইক্ষেত্রে কিছুটা সহযোগীতা করে থাকেন। অন্যদিকে মাধ্যমিক শিক্ষার বেশিরভাগ অংশ নির্ভরশীল হয়ে আছে পাইভেট টিউটর এর উপর। আমরা যদি শহরের শিক্ষার্থীদের দিকে লক্ষ্য করি, দেখা যায় তারা সার্বক্ষণিক বিভিন্ন ব্যাচে দৌড়াচ্ছে। গ্রামে এই সংখ্যা কিছুটা কম। আবার কেউ কেউ বাসায় শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে থাকে। এর মূল লক্ষ্য হলো শুধুমাত্র এস.এস.সি বা এইচ.এস.সি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা। এই ক্ষেত্রে অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের একটাই উদ্দেশ্য থাকে তা হলো গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়া। অর্থাৎ পরীক্ষাকে টার্গেট করে নির্দিষ্ট কিছু বিষয় পড়ালেখা করা হয়।  

উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর একটাই লক্ষ্য তা হলো কোনোরকমে অনার্স বা মাস্টার্স পাস করে চাকরি পাওয়া। ইদানিং কালে আবার মেডিকেল কিংবা বুয়েট হোক সবাই যেন বিসিএস টাকেই জীবনের মূল লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছে। যে কারনে তারা জ্ঞান অর্জন, নতুন জ্ঞান সৃষ্টি বা গবেষণার মতো কাজে মনোনিবেশ করে না। বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায় যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস, প্রেজেন্টেশন থাকলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোতে তার ব্যত্যয় ঘটে।  এসকল কলেজগুলোতে নামে মাত্র অনার্স পাস করে প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী বের হয়। যা শিক্ষার্থীর সংখ্যাগত পরিমাণ বাড়লেও গুণগত মান ধরে রাখতে পারে না। এই জন্য আমরা বিশ্ব র‍্যাংকিং এ কোনো গণনার মধ্যেই আসতে পারি না। যে কারণে বেকারের সংখ্যাও দিন দিন বেড়ে চলেছে।  

বিশ্বমানের শিক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে হলে শুধুমাত্র সমালোচনা ও নিজের মতামতকে চাপিয়ে না দিয়ে জ্ঞান সংরক্ষণে আগ্রহী ব্যক্তিদের শিক্ষাদান কর্মে অগ্রাধিকার দিতে হবে। একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণা কর্মকে প্রসারিত করতে হবে। আমাদের দেশ থেকে যেমন বিদেশে মাস্টার্স বা পিএইচডি করার জন্য প্রতিবছর ছাত্র, শিক্ষক ও বিভিন্ন কর্মকর্তারা যেয়ে থাকেন তেমনি করে বিদেশিদের আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসার জন্য যা যা করার করতে হবে। প্রয়োজনে স্কলারসিপের ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। এভাবে চেস্টা করলে জ্ঞানের নতুন নতুন শাখা যেমন সৃষ্টি হবে তেমনি শিক্ষার মান কিছুটা হলেও ধরে রাখা সম্ভব হবে।


এস এম শামসুল আলম 
ইন্সট্রাক্টর (সাধারণ) 
পিটিআই, খুলনা

 

1 Comments

  1. চমৎকার লিখেছেন।

    ReplyDelete
Post a Comment
Previous Post Next Post

হেলথ টিপস