স্বয়ম্ভু গত নভেম্বরে তিন বছর পেরিয়ে চারে পা দিয়েছে। অতএব এবছর তার স্কুলে যাবার প্রস্তুতি। নিকটবর্তী কিন্ডারগার্টেন থেকে ভর্তি ফরম আনা হলো তার জন্য। কিন্তু বাবার অনীহার কারণে স্কুলে যাওয়া হলো না ঠিক সময়ে। এরমধ্যে করোনা এসে দিল সব মাটি করে। বাবা তো মহা খুশি ছেলের এবছর স্কুলে যেতে হলোনা বলে। স্বয়ম্ভুর বাবা একজন শিক্ষাকর্মী। তিনি শিশু শিক্ষা বিষয়ে দেশ-বিদেশে বিস্তর পড়ালেখা করে ও জাপানে এক বছর শিশুদের শিক্ষক হিসেবে কাজ করে এই ধারণায় পৌঁছেছেন যে, এদেশে শিশু-শিক্ষার নামে যা চলছে তা হলো বনসাইকরণ। তিনি তার সন্তানকে বনসাই বানাতে চান না বলেই এদেশের স্কুলের প্রতি তার অনীহা। স্বয়ম্ভু কথা বলতে শিখেছে একটু দেরিতে, দু’বছর বয়সে। কিন্তু বাংলা ভাষার পুরোটা দখলে নিতে তাঁর সময় লেগেছে ছয় মাসেরও কম! হ্যাঁ শিশুরা এমনই দ্রুততায় শিখতে পারে উপযুক্ত পরিবেশ পেলে। শুধু ভাষা নয় এই পৃথিবীতে শিশুর আগমণের সময় থেকেই পৃথিবীতে জীবন ধারণের উপযোগী সবকিছুই শিশু সহজে শিখে নিতে পারে তার সহজাত প্রবণতায়। ঠিক যেমন বৃক্ষ বিকশিত হয় তার অনিবার্য পরিণতির দিকে। বাবা-মা, পরিবার, বিদ্যালয় প্রতিনিয়ত তাঁকে শৃংখলে আবদ্ধ করতে চায়, ‘না’-এর বৃত্তে তাঁকে বন্দী করতে চায়, সভ্যতার নামে, ধর্মের নামে, নিরাপত্তার নামে নিজেদের পছন্দের ছাঁচে তাঁকে গড়তে চায় ঠিক বনসাই-এর মত! কিন্তু বৃক্ষের সম্ভাবনাকে শিকল পরিয়ে বানানো বাহারী বনসাই-এর কাছেই প্রত্যাশা করি ছায়া! আর তা না পেলেই সন্তান উচ্ছন্নে গেছে বলে হাহাকার। কিন্তু ভাবুনতো দামী বনসাই বানাবার জন্য সন্তানকে যখন শিকড় ছাড়া করেছেন একে একে তখন কি ভেবেছিলেন একবারও?