নীল টিশার্টকে লেখা চিরঅভিমানিনী ~ গ্রীষ্মের সেই মেয়েটার না লেখা চিঠি। কবরী বিশ্বাস অপু

 

নীল টিশার্টকে লেখা চিরঅভিমানিনী ~ গ্রীষ্মের সেই মেয়েটার না লেখা চিঠি।

 


প্রিয় নীল টিশার্ট,

আজকাল প্রচন্ড রাগ হয়। প্রথমে রাগের কারণ বুঝতে না পারলেও বিষয়টি এখন জলের মতো স্বচ্ছ। এই রাগের হেতু তুমি সেই। যদিও আজকাল রাগ এবং অভিমানের পার্থক্য আমি ঢের বুঝতে পারি।

 প্রথম দিককার প্রেমের মতো মনে হয় আজকাল। আজকাল ডুবতেই ভালো লাগে। তোমার প্রেমে আকণ্ঠ ডুবে যেতে। এই প্রত্যাশাটুকুই যত রাগেরই কারণ।

চৌত্রিশোর্ধ্ব বয়সে এসে সেই ১৭/১৮ এর প্রেমের অনুভূতি হচ্ছে। এটা ভেবেই একপ্রকার আপ্লূত লাগছে। মনে হচ্ছে, মনটা মরে যায়নি, মাথার একগুচ্ছ চুল পাকলেও বুড়িয়ে যাইনি এতোটাও।

কিন্তু প্রবল রাগ যে হচ্ছে, এটাও তো অস্বস্তিতে ভোগাচ্ছে।

আবার, প্রথম প্রেমের মতো কত অহেতুক বিষয়ও ভালো লাগছে। এইযে দেখো-

এই বরষায় প্রিয় হয়ে ওঠার কথা ছিল কদমের। কিন্তু বাতাবরণ জুড়ে কাঠগোলাপের জয়কার। খোঁপায়-চুলে, বুকে ও হৃদয়ে, অভিমান- প্রেমে, স্কেচবুকে, ক্যানভাসে, শিল্পচর্চার পরিসর জুড়ে, নান্দনিক ভাবনায় ও দিনযাপনে, সমগ্র ভাবনা জুড়েও তুমি।

এমনও হয় বুঝি?

ঘন শ্রাবণে যদি বসন্ত নামে শরীর ও মনে, কদম-কেয়ার বদলে যদি কাঠগোলাপ বারবার জড়ায় তোমার প্রেমে, ক্ষতি কি তাতে?

বহুদিন ধরে আমি তোমার কাঠগোলাপে, তোমার মধ্যে ডুবে আছি আকণ্ঠ। না ছুঁয়েও ছুঁয়ে যাচ্ছো আমায়!

আরও কিছুকাল নাহয় এমন খুব করে ডুবে থাকি.......

কারণ, আজকাল তোমার ভাবনায় ডুবতেই বেশি ভালো লাগে।

সেই পিচ্চি ক্রিয়েটিভ মেয়েটার মতো চিরঅভিমানিনী হয়ে উঠি সহসা। অথচ, শরীর জুড়ে অভিমানের বদলে সংবেদনশীল হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অভিমান লুকাতে গিয়ে দ্বিগুণ গাল ফুলিয়ে বসে থাকি আজও। এই মিথ্যে অভিনয় আমি আজও পারিনা। অথচ, ভেবেছি

রাগ- অভিমান কোনোটাই প্রকাশ করবো না। না তোমাকে দুঃখ দিয়ে ছোঁব, না অভিমান।

দক্ষ অভিনয় দিয়ে উৎরে যাব সব। উল্টো বিড়ম্বনাই বাঁধছে। তুমিও ঠিক অভিমানের পারদ উঠতে না উঠতে তা কোমল পরশে করে দিচ্ছো ম্রিয়মাণ। অভিমানী হয়ে ওঠার ক্ষেত্র রচনা করে যাচ্ছো অগোচরে। অভিনয়টা ঠিকঠাক না পারলেও এতটুকু যত্ন পেতে, কোমল স্পর্শ পেতে অকারণ অভিমানে গাল দুটো তো লাল করাই যায়। বলো?

আবার দেখো, কেমন ষোড়শী হয়ে উঠি। অকপটে বলে ফেলি সব কথা। আবার, এই যে তুমি একটু ছুঁয়ে যাও, তাতেও অকারণ নেচে উঠি। আবার তোমার একটুখানি অনাদরে মরে যেতে ইচ্ছে করে। এদিকে তোমার প্রেমময় কোমল স্পর্শে আমার তীব্র ব্যথারা হয়ে যায় প্রজাপতি। দুরারোগ্য ব্যাধিকেও আজকাল পরোয়া করিনা যেন। মনে হয় তোমার ভালোবাসার চেয়ে শক্তিশালী এই বসুন্ধরায় আর কিছু নেই, কেউ নেই। কেমন শিশুসুলভ ভাবনা, নাহ বলো?

এই যে, আমরা প্রেমে না পড়লে কী এমন হতো বলো তো?

তুমি না এলে, ধরা না নিলে বৃথাই কি যেত সব?

-চিরঅভিমানিনী ~ গ্রীষ্মের সেই মেয়েটা।

   

কবরী বিশ্বাস অপু
ভাস্কর ও
ইন্সট্রাক্টর (চারু ও কারুকলা)
পিটিআই খুলনা।

3 Comments

  1. বাহ। দারুণ।

    ReplyDelete
  2. Wow , beautiful...💝

    ReplyDelete
    Replies
    1. অশেষ ধন্যবাদ 🥰

      Delete
Post a Comment
Previous Post Next Post

হেলথ টিপস