প্রাথমিক
শিক্ষার মানোন্নয়নঃ স্বপ্ন বনাম বাস্তবতা
প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের
শিক্ষিকারা কথা বলতে গেলেই আক্রমণের শিকার হতে অধিকাংশরা শিক্ষিকারা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত
বলে। তাই, প্রথমেই আত্মরক্ষার্থে জানিয়ে রাখি, আমার মেধাক্রম প্রথম দিকে এবং নিয়োগলাভের
জন্য আমার কোটার প্রয়োজন হয়নি। আমার উপজেলায় আমার ব্যাচে নিয়োগ প্রাপ্ত ৮০% শিক্ষকই
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুইয়েট এবং বাকিরাও যথেষ্ট যোগ্য। যোগ্যতা অযোগ্যতার হিসেব
পাশে রেখে এবারে শিশু শিক্ষা নিয়ে কিছু কথা বলা যাক।
সাধারণভাবে, একজন ব্যক্তির সব রকমের ভিত গঠিত
হয় আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে। ভাষা, ব্যাকরণ, বিজ্ঞান, গণিত,
নৈতিকতা, আচরণ, চিন্তা করার ক্ষমতা সব কিছুই এই ভিত্তির উপর নির্ভর করে বিকশিত হয়।
একটি শিশুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অর্জিত শিক্ষার উপর ভিত্তি করেই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের
শিক্ষকদের তাদের ভবিষ্যত সম্পর্কে করণীয় নির্ধারণ করতে হয়। যে শিশু বাংলা দেখে পড়তে
পারে না তাকে বিজ্ঞান, সমাজ, ধর্ম শিখিয়ে খুব বেশি এগিয়ে নেওয়া যায়না। যে শিক্ষার্থীর
মাতৃভাষা রপ্ত হয়নি, তাকে ইংরেজি শেখানোও প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
শিশুদের বর্ণ পরিচয়, বাংলা বা ইংরেজি পড়তে শেখানো,
সংখ্যা চিনতে শেখানো, যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ শেখানো যে ঠিক কতোটা কঠিন তা এই সেক্টরে
আসার আগে আমার কল্পনাতেও ছিলোনা। বিজ্ঞান ক্লাসে বিষয়ভিত্তিক বক্তৃতা দেওয়ার চেয়ে,
ভাষা পড়তে শেখানো হাজার গুণ কঠিন। একজন কলেজ-শিক্ষকের বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানের গভীরতা থাকা
আবশ্যক, আর পাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রয়োজন শিশুদের মনস্তত্ত্ব বুঝতে পারার ক্ষমতা।
প্রতিটি শিশুই সতন্ত্র। বোর্ডে লিখে বক্তৃতা দিলাম, আর শিশুরা বিষয়গুলো বুঝে নিয়ে শিখে
গেলো এমনটা নয়। পাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতিটা শিশুর কাছেই যেতে হয়, তার মনস্তত্ত্ব,
দুর্বলতা বুঝে সেই অনুসারে করনীয় ঠিক করতে হয়। সহজ কথায়, শিশুদেরকে সত্যিকারভাবে শেখাতে
চাইলে, তাকে শিশু-শিক্ষা বিশেষজ্ঞ হতে হয়।
প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের
যে বেতন কাঠামো, যেখানে প্রতিটি শিক্ষককে (যদি পৈত্রিক সম্পত্তি না থাকে) প্রতিক্ষণ
সংসারের অনটনের দুঃশ্চিন্তায় থাকতে হয়। এমতাবস্থায়, সেখানে একজন শিক্ষক কি আদৌ নিজেকে
শিশু-শিক্ষা বিশেষজ্ঞ হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ পান? সাহিত্য, নাটক, সিনেমায় শিক্ষককে
পুরাতন জামা, হাতে একটা পুরাতন ছাতা এবং জীর্ণ স্যান্ডেল পায়ে উপস্থাপন করার ব্যাপারটি
আর কতোদিন চলবে?
শিক্ষকদের দশম গ্রেড দিতে আপত্তির কারণ হিসেবে
অনেকেই পূর্বে নিয়োগকৃত কিছু শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতার দিকে দৃষ্টিপাত করেন। যারা
এই জায়গাটিতে আপত্তি করেন, তারা কি এই সমস্ত শিক্ষকবৃন্দ অবসরে যাওয়ার পর শিক্ষা ব্যবস্থাকে
নতুন করে সাজাতে চান? তাহলে কি ততদিন শিক্ষা ব্যবস্থা যেভাবে আছে সেভাবেই চলতে থাকবে?
এই চিন্তা কি আদৌ বাস্তবসম্মত? প্রকৃতপক্ষে, কোন একটা জায়গা থেকে তো আমাদের শুরু করতে
হবে। এটাই সত্য যে, যেদিন প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশা একটি আকর্ষণীয়
পেশায় পরিণত হবে, সেদিন থেকে দেশ উন্নত হতে শুরু করবে। শিক্ষকতা পেশা এতোটাই আকর্ষণীয়
হওয়া উচিত, যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা শিক্ষার্থীটি শিক্ষক হওয়ারই স্বপ্ন দেখে। গাছের
গোড়া কেটে আগায় জল ঢাললে কি আদৌ কোন লাভ হবে? দশম গ্রেড বাস্তবায়নের পর নিয়োগ প্রক্রিয়াকেও
যুগোপযোগী ও ঢেলে সাজানো হোক। প্রিলিমিনারী, লিখিত, মৌখিক পরীক্ষা, ডেমো ক্লাশ নেওয়া
ইত্যাদির মাধ্যমে যতরকমভাবে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব, সেভাবে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া
হোক। পূর্বে নিয়োগপ্রাপ্তদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হোক। আর, এভাবেই একটি
উন্নত রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন পূরণ হতে পারে।
সুন্দর ও যুক্তিক লেখা; government should consider it as early as possible
ReplyDeletethanks for reading and your nice comment
Deletethanks for reading and your nice comment
ReplyDelete