ঈষৎ বাদামী চোখের ছেলেটা
ঈষৎ
বাদামী চোখের দেয়া শাড়িটা পরে
আজ সকালে অফিসে এসেছি।অফিস শেষ করে তার
সাথে শেষবারের মতো দেখা হবে।অফিসে
আজ অনেক কাজ।কিন্তু কোনোকিছুই
আমাকে ভাবাচ্ছেনা।
এই শহরে তার প্রথমবার
আসা এবং হয়তো শেষবারও।
সে আসবে অথচ আমার
কোনো উত্তেজনা নেই।এত শান্ত-স্নিগ্ধ আমাকে এর আগে কখনও
দেখেছি বলে মনে পড়ছেনা।
অথচ
তাকে ভেবেই আমার আনন্দে কেটে
যেত ঘণ্টার পর ঘণ্টা,দিনের
পর দিন।আমি আনন্দে তিড়িংবিড়িং করে বেড়াতাম এ
ঘর থেকে সে ঘর।আমার
পথচলাকে আরও রোমাঞ্চিত করত
সে।তার আসার উত্তেজনায় ঘটে
যেত কত অঘটনও!অনন্তকাল
কাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করতো
তাকে ভেবে।এমন সুখকর অনুভূতি আর হয়না।সে অনুভূতি
ভাষায় প্রকাশ করাও যায় না।
সেসবও
আমার মনে কোনো দাগ
কাটছেনা।নির্বিকার এবং ভীষণ পরিপাটি
লাগছে নিজেকে।
আবার
নিজেকে বুঝাচ্ছি,চোখ ভেজানো যাবেনা
কোনভাবেই। তাকে দেখানো যাবেনা
ভেজা চোখ।আজ তার কাছে নিজেকে
ভীষণ বড় প্রমাণ করতে
ইচ্ছে করছে যেন বড়দের
মতো পরিনত আচরণ করতে পারি!অথচ তার চুল
পাকা দেখতে দেখতে আমার বড় হবার
কথা ছিল!
আবার ভাবছি,যদিও
দুচোখ ভরে ওঠে জলে,
সে কী সামনে থেকে
আমার পাশে এসে বসবে?আমার হাত দুটো
কি শক্ত করে ধরবে?আমাকে কি বাহুডোরে আগলে
নেবে?মুছে দেবে কি
চোখ?আমার কি তাকে
ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করবে?তার আঙুলে
আঙুল রাখতে ইচ্ছে করবে?ইচ্ছে করবে
কি সজোরে জড়িয়ে ধরতে? আমার অনেক কথা
কি বলতে ইচ্ছে করবে?
নাকি একটি শব্দও উচ্চারিত
হবেনা?
এসব
ভাবছি আর অফিসের কাজ
সেরে নিচ্ছি। এত স্বাভাবিক কেন
লাগছে আমাকে?
চাকরি
প্রাপ্তির এই সাফল্যটুকুও তাকে
জানানো হয়নি অভিমানে!তাকে
বলা হয়নি, না
বলা কথারা জমে জমে পাহাড়
হয়েছে সেই কবেই।সে পাহাড়
ডিঙানোর ক্ষমতা বা ইচ্ছে আমার
আর নেই।আমি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি বিচ্ছেদের।বলা
হয়নি বুকের মধ্যে দুমড়েমুচড়ে গেছে কতবার তোমাকে
মিস করে!
গত এক যুগে আমাদের
অগুনিত সুখস্মৃতি জমা হয়েছে।প্রথম দেখার
আগে থেকেও জমিয়েছি অসংখ্য সুখকর মুহূর্ত। সেসব চোখের সামনে
ঝলমল করে উঠছে। নস্টালজিকও
হচ্ছি।হচ্ছি ভারাক্রান্ত!এখন বিষন্ন লাগছে
খুব!
সেও
কি আমাকে ভাবে?তার স্বপ্নে
আমি আসি? তাকে ছুঁয়ে
যাই আগের মতোন?
যদিও
এসব কোনোকিছুই আর ভাবার সুযোগ
নেই।চূড়ান্ত বিচ্ছেদটা হয়ে যাবে আজই।দেখা
হবার পরে যে যার
মতো চলে যাব!তাকে
আমি ফেসবুক থেকে ব্লক করে
দেব,ব্লক করে দেব
ইমেইলও।আমার ফেইক আইডিটাও ডিলিট
করে দেব।কারণ,আমি লুকিয়েও তাকে
দেখবোনা আর!আমি কথা
দিয়ে কথা রাখতে শিখেছি
অনেক আগেই।
আসলে,"অধিকার ছাড়িয়া দিয়া অধিকার ধরিয়া রাখার মত বিড়ম্বনা আর হয় না”