প্রভাত গাথা


প্রভাত গাথা



জানালা খুলেই খোকা দেখলো গাছের নীচের ঘাসেরা এখনো মাথা গুঁজে ঘুমের দেশে
 দুয়েকটি পাখির বাসা থেকে (পাখির) ছানাদের চিকচিক শব্দ আসতে শুরু করেছে।
পুব আকাশে এক তাল রং ছড়িয়ে সূয্যিমামা আড়মোড়া ভেঙ্গে চোখ মেলছেন!
বড়গাছ; কইরে পাতারা ওঠ, নে আর ঘুমাতে হবেনা দেখ-দেখ সুয্যিমামা উঠে পড়েছে।
পাতারা হাই তুলে বলল- এইতো উঠে পড়েছি।
তাদের উঠার পত পত শব্দ পাওয়া গেল।
বড়গাছ; শি-ক-ড় ওঠ তাড়াতাড়ি। কত কাজ পড়ে আছে। পানি আনতে হবে, লবন আনতে হবে তবেই না রান্না হবে।
শিকড়েরা দ্রুত বিছনা-পত্র গুছিয়ে পানি ও লবণ আনতে চলে যায়। মাটিতে মিশে থাকা লবণ পানি সংগ্রহ করে পাতার কাছে পৌঁছে দেয়।
পাতারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে থাকে- “এই বেলা রান্নাটা সেরে ফেলতে হবে”। এই বলেই লবণ, পানি, বাতাস ও সুয্যিমামার আলো দিয়ে খাবার তৈরি করে। যা সে কাণ্ড, ফল ও শিকড়কে দেয় ও নিজে খেয়ে বড় হয়।
ফুলকড়ি- “মা-মা, আমাকে ছাড়োতো। আর ঘুমাবো না দেখছো না সুয্যিমামা উঠে পড়েছে”?
 এই বলে রাতের আঁধারে ফুলের ঘুমন্ত যে কুঁড়িটি ঘাপটি মেরে মায়ের কোলের মধ্যে শুয়ে ছিল সে এখন হলুদ পাপড়ি মেলে বাতাসের তালে দুলতে থাকে। হামজাম গাছের পাতার ফাঁকে টুনটুনির বাসা থেকে হঠাৎ চিৎকার শোনা গেল। বড়গাছ, হলুদফুল, বাতাস, রোদ সবাই একসাথে সেদিকে তাকিয়ে বলল- কী হলো?
মা টুনটুনি বলল –আরো একটু ঘুমাও সোনারা সকাল হতে এখনো দেরী আছে।


ছানারা বলল, উঁহু সকাল হয়নি?
ভাঁটফুলের গন্ধ বেরিয়েছে; পাতারা নড়ছে; বাতাস দোল দিচ্ছে! সব আমারা দেখেছি, আমারা আর থাকবো না। এই কথা বলেই, ছানা দুটো ফুড়ুৎ করে বাসা থেকে উড়ে গিয়ে পাশের গাছে বসল।


ছোট ছানাটি বলল, দেখো ‘বড়’কী সুন্দর সকাল! এমন সকালে কী কেউ ঘুমিয়ে থাকে?
বড় ছানাটি বলল-ঠিক বলেছিস ছোট।
চল এমন সুন্দর সকালে একটু উড়া-উড়ি খেলি। এই বলেই তারা উড়ে এগাছ থেকে ওগাছে চলে যায়।
বড় গাছটির গোড়ার দিকে একটি উঁই পোকার ঢিবি। রাতে চাঁদের আহবানে উপরে উঠে এলে আর ফিরে যেতে পারেনি, বেশির ভাগই পরাজিত ভাবে পাখা খুলে পড়ে আছে!
এদিকে পাশের একটি গাছে শালিক, বুলবুলি দোয়েলসহ আরো অনেক পাখি মিলে মিশে থাকে। বুলবুলি একটু আগেই ঘুম থেকে উঠে দাঁত মাজার জন্য ব্রাশ নিয়ে হাঁটতে বেরিয়ে দেখল গাছের নীচে কী যেন পড়ে আছে। সে বলল, ওমা ওটা কি?
একটু কাছে এগিয়ে গিয়ে কয়েকটি তুলে মুখে পুরে দিল। খেতে খেতে অন্য বন্ধুদেরও ডাকতে লাগলো। সাথে সাথে বুলবুলি,দোয়েল,ফিঙেসহ আরো অনেক গুলো পাখি এসে জুটে। নিজেরা পেট ভরে খায় এবং ছানাদের জন্য মুখে পুরে নিয়ে যায়।
ক্ষানিক দূরে দেখা গেল কতগুলো পাখির ছানারা কী যেন করছে। খোকা এগিয়ে গিয়ে দেখল-পাখিদের পাঠশালায় উড়া শেখানো হচ্ছে। একজন বড়মত ফিঙে শিক্ষক এবং বিভিন্ন পাখির ছানারা শিক্ষার্থী! সবাই নিজ নিজ কাজে খুব ব্যস্ত। কোন দিকে তাকানোর সময় নেই।
এরই মধ্যে লাল, নীল, হলুদ আরো কত নাম না জানা ফুল যে ফুটতে শুরু করছে তার কোন ইয়াত্তা নেই। ফুলের গন্ধে চারদিকে মো-মো করতে থাকে। তা দেখে বাহারী প্রজাপতি পাখা দুলাতে দুলাতে লাল ফুলের কাছে এসে বলল,বন্ধু কেমন আছো?
ফুল মাথা দুলিয়ে ভালো আছি বলেই তার পাপড়ি মেলে ধরে প্রজাপতির সামনে। এক নিমিষে শোঁ শোঁ করে ফুলের সবটুকু মধু শুষে নিয়ে প্রজাপতি ওড়ে যায় অন্য কোন ফুলের সন্ধানে।
একটা গুনগুন শব্দ শুনে সেদিকে খোকা তাকিয়ে দেখে এক ঝাঁক মৌমাছি ওড়ে চলেছে; টুনটুনি চিৎকার করে বলে; কোথায় যাচ্ছো মৌমাছিরা?
কে একজন উড়তে উড়তে বলল, খাবার খোঁজে যায় গো ......।
তোমরা সব ভালো তো?
টুনটুনির উত্তর না শুনেই তারা উড়ে গেল খাবারের সন্ধানে কোন এক অজানা ঠিকানায়।
পিনপিনে গলায় একটি পিঁপড়া কমান্ডার আদেশ করছে; “। এদিকে এসো”-
আর তার পেছনে-পেছনে চলছে অসংখ্য সৈন্য, যাদের সকলের মাথায় সাদা সাদা ছোট কিসের টুকরা! খোকা ভালো করে দেখে বুঝল তা চিনি। সকলে মিলে কোথা থেকে সংগ্রহ করে শীতকালীন খাবার হিসেবে মজুদ করতে চাই। কারো কোন দিকে নজর নাই; সবাই একমনে হেঁটে চলেছে।
খোলা জানালা দিয়ে সূয্যিমামা খোকার কপালে উষ্ণ স্পর্শ দিয়ে কানে কানে বলে; কী গো আর কত ঘুমাবে? চোখ খুলে দেখ নতুন সকালকে---!
এরই সাথে সকালের মিষ্টি রোদ এসে খোকার গালে আলতো ছোঁয়া দিয়ে গান গেয়ে ওঠে-


ওঠো ওঠো রে
বিফলে প্রভাত বয়ে যায় যে
মেলো আঁখি জাগোরে থেকো নারে অচেতন!!
খোকা চোখ মেলেই মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। আর মনে মন ভাবে এতক্ষণ তাহলে স্বপ্ন দেখছিলাম! সবাই কেমন কাজ করছে আমারও তো অনেক কাজ আছে! অমনি লাফ দিয়ে মায়ের কোলে উঠে গলা জড়িয়ে ধরে-।

আজমীরা শ্যামা
কোর্টপাড়া,মেহেরপুর 
১৫ আগস্ট ২০১৯ ইং
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

হেলথ টিপস