ঈষৎ বাদামী চোখকে লেখা চিরঅভিমানিনীর না লেখা চিঠি। কবরী বিশ্বাস অপু

 ঈষৎ বাদামী চোখকে লেখা চিরঅভিমানিনীর না লেখা চিঠি




আজ বিকেলে বিদায় নেবার আগে আমার আলুথালু খোঁপা থেকে গোলাপের অস্ফুট ম্রিয়মাণ কুঁড়িটি ঈষৎ বাদামী চোখের আঙুলে গুঁজে দিয়ে বললাম-


"যখন যাব চলে ওরা  ফুটবে তোমার কোলে,

তোমার   মালা গাঁথার আঙুলগুলি   মধুর বেদন ভরে

যেন   আমায় স্মরণ করে॥"


মূলত তার আঙুল ছোঁবার ছুতোই ছিল শুষ্ক গোলাপ কুঁড়ি দেবার অগোচরে!

মাঝে মধ্যে মনে হয় -কবিগুরু কেমন জীবনজুড়ে আছেন। রোগ-শোক, প্রেম-অপ্রেম, মিলন-বিরহ, মন্দ-ভালো সবকিছুতেই। জীবনকে জাগিয়ে রাখেন তার জীবনঘনিষ্ঠ প্রেমময় সৃষ্টি দিয়ে! 

আমার শরীর ভালো নেই আজ। বিবর্ন,বিষণ্ণ,বিপর্যস্ত লাগছে। সেসব ছাপিয়ে বিদায় নেবার আগে তোমার সাথে দেখা করে আসারও ব্যাকুলতা সংবরণ করা গেলনা। তাই তোমাকে একপলক দেখে আগামী দেখা হওয়া পর্যন্ত নিজেকে প্রাণিত করার নির্যাসটুকু নিলাম। তুমি রইলে বসে। আমি বেরিয়ে পড়লাম।

চিরযৌবনা কদমের শরীর জুড়ে ভারী বর্ষার জল, তবু ঘেমে গলে শাড়ির প্রেমময় ভাজগুলো আমার শরীরে তোমার মতো লেপ্টে যাচ্ছিলো। ক্লান্ত পায়ে শাড়ি জড়িয়ে এলে শান্তিনিকেতনের গরমের দিনগুলো চোখে জ্বলজ্বল করে। মাড় ছাড়া আলুথালু শাড়ি, গরমে গলে যাওয়া চোখ ভরা গাঢ় কাজল, সাইকেল -এসব স্মৃতিতে অমলিন। দুঃখ,অসুস্থতা সবকিছু ছাপিয়ে যেন চিরপ্রেমিকা হয়ে উঠি। দু'কদম হেঁটে যখন রিকশায় উঠলাম তখন মনের মধ্যে উঁকিঝুঁকি দিয়ে জানান দিল যে,

গোলাপ কুঁড়িটি তুমি কী করেছিলে?  সে গোলাপ কুঁড়ি দল মেলেছিল কিনা তাও জানিনা। নাকি তা ফেলে দিয়েছিলে গোপনে? পাছে গুরুত্বহীনতার তাপে পুড়ে যায় হৃদয়! 

ততটা পুড়ে যাইনি আগুনে

যতটা পুড়েছিলাম অন্ধকারে!

ততটা ক্ষয়ে যাইনি আঘাতে 

যতটা ক্ষয়েছিলাম অনাদরে।

এসব ভাবতে ভাবতে রিকশা যখন খানিকটা দূর। হঠাৎ তার পারফিউম আমাকে আন্দোলিত করে গেল যেন।মনে হলো যেন, এই পথে সে সদ্য ছড়িয়ে গিয়েছে তার ভালোবাসার গন্ধ, যা আমাকে মোহাবিষ্ট করছে। চোখ বন্ধ করে আমি সহসা তার একজোড়া ঈষৎ বাদামী চোখের অতলে তলিয়ে গেলাম যেন!

একথা আমি তাকে একদিন বলেছি যে, আমি তোমার পারফিউমের গন্ধ অনুভব করি। আশেপাশে তোমার অস্তিত্ব, তোমার উপস্থিতি আমার বুকের মধ্যে কড়া নাড়ে যেন!

ইচ্ছে করছিল রিকশা থেকে নেমে ফিরে আসি তোমার কাছে। হাতদুটো শক্ত করে ধরে বলি, শরীর খারাপ লাগছে। পায়ে ব্যথা করছে। পিঠের ব্যথাটা বেড়েছে! খুব অভিমানে গাল ফুলিয়ে বলে দিতে ইচ্ছে করছে-

 তুমি কেন আমাকে দেখে বুঝলেনা যে, চিরঅভিমানিনী র আজ শরীর ভালো নেই? কেন জিজ্ঞেস করলেনা?

এমন তো হতেই পারত যে,

তুমি বুকের মধ্যে জড়িয়ে বলো-

"ব্যথারা সব জমা হোক বরষার মেঘে,

ব্যথারা সব এক বিকেলে ঝরে যাক আষাঢ়ী উদ্বেগে।"

এমন বিপর্যস্ত বহুদিন লাগেনি। চোখ ভিজে গেল সবার আড়ালে। গাল বেয়ে অবিরল গড়িয়ে পড়লো জল। তা কেউ দেখলোনা। বিকেল হেলে পড়েছে। ক্লান্ত পায়ে পায়ে অপুময় জগতে প্রবেশ করলাম।একটা তীব্র- দীর্ঘ স্নান সেরে নিলাম।

 সকল ক্লান্তি ছাপিয়ে এখন আমার ভীষণ প্রেম দরকার, ঘুম দরকার।

তারপর এসব ভাবতে ভাবতে কখন যেন তোমার স্বপ্নে বিভোর ক্লান্ত চোখ লেগে এলো......

তোমার জন্য জমাচ্ছি যে কথা- 

স্পর্শ-আকুল ব্যাকুলতা 

সে শব্দের মালা গাঁথবো এক বাদল বিকেলে, 

অথবা 

অলকানন্দা ভোরে.....

তারপর ঘুম ভেঙে গেলে তোমাকে লিখবো বৃষ্টিমগ্ন- বাদল বিকেলের সেই অপুময়- অনুপম গল্প। যেখানে চিরঅভিমানিনী হয়ে উঠেছিল ষোড়শী প্রেমিকা,

তুখোড় বক্তা থেকে  মুগ্ধ শ্রোতা......

আর,

তুমি হয়ে উঠেছিল যেন স্বয়ং কবিগুরু.....

কবরী বিশ্বাস অপু 
ভাস্কর ও ইন্সট্রাক্টর (চারু ও কারুকলা) 
পিটিআই খুলনা।
kabari.biswas.ku@gmail.com

1 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post

হেলথ টিপস