যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল: আধুনিক সন্ত্রাসবাদের নতুন রূপ
আজকের
বিশ্ব রাজনীতিতে “সন্ত্রাসবাদ” একটি বহুল ব্যবহৃত শব্দ। তবে প্রশ্ন হলো—কে
সন্ত্রাসী? এবং কে নিরীহ মানুষের ওপর দমননীতি চালাচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে
গেলে বারবার উঠে আসে দুটি রাষ্ট্রের নাম—যুক্তরাষ্ট্র
ও ইসরায়েল। এরা নিজেরা নিজেদের "গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের রক্ষক" বলে
দাবি করলেও, তাদের বাস্তব কর্মকাণ্ডে উঠে আসে উল্টো চিত্র।
যুক্তরাষ্ট্র: শক্তির নামে ধ্বংস
১৯৯০-এর
দশক থেকে যুক্তরাষ্ট্র ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’-এর নামে একের পর এক মুসলিম দেশে
সামরিক অভিযান চালিয়েছে। ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া ও সিরিয়ায় মার্কিন হস্তক্ষেপ
কেবল সরকার পতনে সীমাবদ্ধ ছিল না—বরং এসব দেশে কোটি কোটি মানুষ
বাস্তুচ্যুত হয়, লাখো মানুষ প্রাণ হারায়।
বিশেষ করে ইরাকে কথিত ‘জৈব অস্ত্র’ খোঁজার অজুহাতে হামলা চালানো হয়, অথচ পরে
প্রমাণ মেলে—সেই অস্ত্র আদৌ ছিল না।
ড্রোন
হামলার নামে ইয়েমেন, পাকিস্তান ও সোমালিয়ায় বেসামরিক মানুষ হত্যা এখন এক
নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এসব হামলায় শিশু, নারী ও নিরীহ মানুষ নিহত হলেও, সেগুলো কখনো
যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয় না।
ইসরায়েল: ফিলিস্তিনে দখল ও দমন
ইসরায়েল
১৯৪৮ সাল থেকে ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর দখলদারি ও দমননীতি চালিয়ে যাচ্ছে। গাজা
উপত্যকায় বারবার সামরিক অভিযান চালানো হয়েছে, যেখানে অসংখ্য নারী-শিশু নিহত হয়েছে।
পশ্চিম তীরে বসতি নির্মাণ, জোরপূর্বক উচ্ছেদ, এবং চলাচলের স্বাধীনতায় নিষেধাজ্ঞা—সব
মিলিয়ে ফিলিস্তিনিদের জীবন আজ দুর্বিষহ।
বিভিন্ন
মানবাধিকার সংস্থা যেমন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
ইসরায়েলের এই কার্যকলাপকে ‘অপারথেইড’ বা জাতিগত নিপীড়ন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
দ্বিমুখী নীতি ও বৈশ্বিক প্রভাব
এই
দুটি রাষ্ট্র বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে হস্তক্ষেপ করে এবং তারপর তাদের বিরোধীদের
‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দেয়। উদাহরণস্বরূপ, আফগানিস্তানে এক সময় যুক্তরাষ্ট্র নিজেই
মুজাহিদিনদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়েছিল, যারা পরে তালেবান হয়ে ওঠে। আজ তারা
তাদেরই সৃষ্টি 'উগ্রবাদ' দমনে আবার বোমাবর্ষণ করছে।
অন্যদিকে,
ইসরায়েলের জঘন্যতম হামলাকেও যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো 'আত্মরক্ষা' বলে
বৈধতা দেয়। এই দ্বিমুখী নীতি বিশ্বজুড়ে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
উপসংহার
বিশ্বে
প্রকৃত সন্ত্রাসবাদ শুধু অস্ত্র হাতে পথচারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়—বরং
রাষ্ট্রীয় নীতির ছত্রছায়ায় পরিচালিত দমনপীড়নই আজকের সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদ।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের দমনমূলক কার্যক্রম প্রমাণ করে যে, শক্তির অপব্যবহার,
দখলদারি মানসিকতা এবং মানবাধিকারের ভণ্ডামি যতদিন চলবে, ততদিনই সন্ত্রাসবাদ বিশ্বে
ছড়িয়ে পড়বে—আর নিরীহ মানুষের রক্তেই তার খেসারত
দিতে হবে।