বাংলা নববর্ষ: ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মহামিলন
বাংলা
নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ বাঙালির সর্বজনীন উৎসব, যা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে
সবাইকে এক সুতোয় বাঁধে। এটি কেবল একটি নতুন বছরের সূচনা নয়, বরং বাঙালির প্রাণের
উৎসব, যা ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির প্রতীক। বৈশাখ মাসের প্রথম দিনে পহেলা
বৈশাখ উদযাপনের রীতি প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে, যা আজও তার প্রাণবন্ততা ধরে
রেখেছে।
ঐতিহাসিক পটভূমি
বাংলা
সনের প্রবর্তন করেন মুঘল সম্রাট আকবর। তাঁর শাসনামলে কৃষি ও রাজস্ব ব্যবস্থার
সুবিধার জন্য বাংলা সন চালু করা হয়। ফসলি সন হিসাবে এর প্রচলন শুরু হয়, যা
পরবর্তীতে বাঙালির জীবনের সঙ্গে অঙ্গীভূত হয়ে যায়। বাংলা নববর্ষের উদযাপন কৃষি ও
প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত, কারণ এ সময় কৃষকেরা নতুন ফসল ঘরে তোলে এবং আনন্দ প্রকাশ
করে।
উদযাপনের রীতি
পহেলা
বৈশাখের উৎসব শুরু হয় মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা
ইনস্টিটিউটের আয়োজনে এই শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে হাজারো মানুষ। রঙিন মুখোশ, ফুল,
পুতুল ও বিভিন্ন শিল্পকর্ম নিয়ে এই শোভাযাত্রা বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে
ধরে।
গ্রামীণ
এলাকায় নববর্ষের উৎসব পালিত হয় হালখাতা, বৈশাখী মেলা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক
অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। এদিন মানুষ পরিধান করে ঐতিহ্যবাহী পোশাক। নারীরা পরে
শাড়ি, পুরুষেরা পরে পাঞ্জাবি। ঘরবাড়ি পরিষ্কার করে, বিভিন্ন পিঠা-পুলি ও মিষ্টি তৈরি
হয়। ব্যবসায়ীরা ‘হালখাতা’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পুরোনো হিসাবের ইতি টেনে নতুন খাতা খোলেন
এবং ক্রেতাদের মিষ্টিমুখ করান।
সাংস্কৃতিক আবহ
পহেলা
বৈশাখের সঙ্গীত, নৃত্য ও কবিতায় ফুটে ওঠে বাঙালির আবেগ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল
ইসলাম ও লালন ফকিরের গান এই দিনের বিশেষ আকর্ষণ। এদিন সবাই পান্তা-ইলিশ খাওয়ার
রীতি পালন করে, যা গ্রামীণ সংস্কৃতির অংশ। শহরেও নাগরিক জীবনে এই ঐতিহ্য এখন
জনপ্রিয়।
সম্প্রীতির উৎসব
বাংলা
নববর্ষ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে এক করে। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান—সবাই
মিলে এই উৎসব পালন করে। এটি বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীক।
বাংলা নববর্ষ
বাঙালির প্রাণের উৎসব, যা আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধারণ করে। এটি শুধু নতুন
বছরের সূচনা নয়, বরং নতুন আশা, নতুন স্বপ্ন ও সম্প্রীতির বার্তা বয়ে আনে। এই উৎসব
আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করে এবং বাঙালিত্বের গর্বকে জাগ্রত রাখে।
এস এম শামসুল আলম
ইন্সট্রাক্টর (সাধারণ)
পিটিআই, খুলনা