কোভিড-১৯: শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার

 


 আমাদের দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর সহজলভ্য ইন্টারনেট সুবিধা দূরবর্তী শিক্ষায় অংশগ্রহনের উপকরণের অভাব রয়েছে নতুন নতুন অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারের সাথে পরিচয় করানোর সময় কেবল শিক্ষার্থীরা নয়, কখনও কখনও শিক্ষকরাও অসুবিধার মুখোমুখি হন কোভিড-১৯ রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা বিশ্বব্যাপী জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এই সংক্রমণের প্রভাব হ্রাস করতে ইতোমধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে শুরু করেছে আমাদের মনে রাখতে হবে শিশু এবং তরুণ শিক্ষার্থীরা হল ভবিষ্যত বিশ্বের তত্ত্বাবধায়ক

 

শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংক্রমণ রোধে বিশ্বজুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানবন্ধ রয়েছে গবেষণা থেকে জানা যায় যে, বিশ্বব্যাপী ১.২ কোটিরও বেশি শিশু শ্রেণিকক্ষের বাইরে রয়েছে ইউনিসেফের পর্যবেক্ষণ অনুসারে, বর্তমানে বিশ্বের ১৩৩ টি দেশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধকরণ বাস্তবায়ন করেছে, যা বিশ্বের শিক্ষার্থীদের প্রায় ৯৮. শতাংশকে প্রভাবিত করছে। যার ফলে শিক্ষাব্যবস্থায় নাটকীয় পরিবর্তন ঘটেছে উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের কারণে অনিশ্চিত হয়ে পড়া চলতি বছরের উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার বিষয় কমিয়ে কম সময়ে তা নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়মিত কার্যক্রম বন্ধ থাকায় চলতি শিক্ষাবর্ষ ডিসেম্বর থেকে বাড়িয়ে আগামী ফেব্রুয়ারি বা মার্চ পর্যন্ত করার ইঙ্গিত দেন শিক্ষামন্ত্রী তিনি আরো বলেন, মুহূর্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার মতো অবস্থা নেই অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে হবে খুলতে দেরি হলে শিক্ষাবর্ষ ডিসেম্বরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হবে, নাকি আগামী বছরের দুইতিন মাস যুক্ত করা হবে, তা ভাবা হচ্ছে এমতবস্থায় -লার্নিং ক্রিয়াকলাপের উত্থানটি বেশ দৃশ্যমান, যার মাধ্যমে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে দূরবর্তীভাবে পাঠদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে হঠাৎ দূরবর্তী শিক্ষা পদ্ধতির আকস্মিক পরিবর্তনটি মহামারী পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যন্ত কীভাবে অনলাইনে শিক্ষকতা এবং শেখার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে পারবে এই প্রশ্নটি কিছুটা অবাক করে দিয়েছে এই প্রক্রিয়াটি বিশ্বব্যাপী শিক্ষা ব্যবস্থায় কী প্রভাব ফেলবে?

 

প্রযুক্তি আজ শিক্ষা খাতকে রুপায়ণ পরিচালনা করছে স্মার্ট উপায়ে প্রযুক্তি ব্যবহার করা এই মহামারী চলাকালীন শিক্ষা খাতে সেরা সম্ভাব্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে তবে "প্রযুক্তিগতভাবে স্মার্ট" হল  বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন এবং ডিভাইসগুলো কীভাবে পরিচালনা করতে হয় শুধু তা শিখতে পারা নয়; ইন্টারনেট প্রোটোকল, শর্তাদি এবং গোপনীয়তা নীতি সম্পর্কেও সচেতন হওয়া তবুও ইন্টারনেট এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করার সময় কিছু সম্ভাব্য সমস্যা রয়েছে যারা বিশেষজ্ঞ এবং প্রযুক্তি ব্যবহারে অভিজ্ঞ, তাদের অবশ্যই এটি অন্যের জন্য নিরাপদ করে তুলতে হবে এবং দুর্বলদের সাহায্য করতে হবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষকদের চেয়ে বেশি জ্ঞান রাখে কারণ তারা বর্তমান সমস্যাগুলো সবসময় অনুসন্ধান এবং আলোচনা করে

 

 -লার্নিং প্রক্রিয়াটি শ্রেণীকক্ষের বাইরে শেখার সুযোগ তৈরি করে কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে -লার্নিং এর মাধ্যমে শেখানো এবং শেখার সুযোগ তৈরি হতে এখনও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে অল্প বয়স্ক শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো, অনলাইন মাল্টিমিডিয়া রিসোর্স এবং ব্যক্তিগত ব্লগে আরও বেশি অভ্যস্ত; অন্যদিকে প্রবীণ ব্যক্তিরা অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার এবং ওয়েবসাইটগুলো পরিচালনা করতে সমস্যায় পড়ে যান ভাগ্যক্রমে -লার্নিংয়ের ইতিবাচক দিকটি নেতিবাচক দিকের চেয়ে বেশির কার্যকর

 

বাংলাদেশ সরকার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সংসদ টেলিভিশনে ক্লাস পরিচালনা করে আসছে, আবার অনেক সরকারী বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনলাইন ক্লাস গ্রহণ করছে। তবে দরিদ্র গ্রামীণ পরিবারগুলোর শিক্ষার্থীরা এই সুবিধাটি গ্রহণ করতে পারছে না। কারণ আমাদের দেশের অনেক  পরিবারে এখনও কোন টিভি, স্মার্টফোন বা ইন্টারনেট নেই  যার জন্য বাংলাদেশের পল্লী দরিদ্র অঞ্চলের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী তাদের পড়াশুনা নিয়ে দারুণ সমস্যায় পড়েছে

 

যাইহোক, এই বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে আর কোন অজুহাত নয় তবে বয়সের বাধা পেরিয়ে বিশ্বজুড়ে শিক্ষিত ব্যক্তিরা নতুন নতুন শিক্ষণ কৌশল এবং পদ্ধতির উদ্ভাবন করে চলেছে এবং শিক্ষার্থীরা দ্রুত উপায়ে ডিজিটাল শেখার প্রক্রিয়াতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে থমকে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ৷ ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বিভাগে পরীক্ষামূলকভাবে অনলাইন ক্লাস শুরুও হয়েছে ৷ তবে আসন্ন জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগ ইনস্টিটিউটকে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালুর অনুরোধ জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ

 

সর্বোপরি বিশ্বব্যাপী যেকোন সঙ্কটের সময়, শিক্ষকদের দায়িত্ব তাদের শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ তৈরি করা, তাদের শিখতে সহায়তা করা, মমত্ববোধ গড়ে তোলা এবং একটি নিরাপদ, স্মার্ট এবং যত্নশীল জাতি গঠনে স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করা। কোনো শিক্ষার্থীই যেন ইন্টারনেট সংযোগসহ প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা, প্রতিবন্ধকতা অর্থনতিক অসচ্ছলতার কারণে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে না থাকে, জন্য পর্যায়ক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

মোঃ মিনহাজুল কবীর

প্রভাষক, ইংরেজি বিভাগ

যশোর সরকারি সিটি কলেজ, যশোর

 

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

হেলথ টিপস